ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: পাকিস্তান আইএমএফকে অবগত করেছে যে বন্যা উদ্ধার ও ত্রাণের জন্য তাদের ৩,৪০০ কোটি রুপি খরচ হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই সমপরিমাণ রুপি প্রদান করে বাজেট সমন্বয়ের জন্য তারা ঋণদাতাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
কর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য পাকিস্তান সরকার চলতি অর্থবছরে একটি বন্যা শুল্ক চাপানোর কথা চিন্তাভাবনা করছে। এর জন্য সঠিক পদ্ধতি নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নীতিগতভাবে অতিরিক্ত কর ব্যবস্থা গ্রহণে সম্মত হলেও তারা এ ব্যবস্থা এমনভাবে গ্রহণ করতে চায় যেন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং নিম্ন প্রবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা না হয়। তাই তারা চলতি বছরে যারা উচ্চ মুনাফা অর্জন করেছে শুধু তাদের উপরেই এই বন্যা শুল্ক আরোপ করার চিন্তা করছে। যদিও এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।
সরকার বিআইএসপি সহ বন্যা ব্যয় এবং প্রাদেশিক সরকারগুলোর পাবলিক সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (পিএসডিপি) এবং বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (এডিপিএস) সহ চলতি অর্থবছরে ত্রাণ ও পুনর্বাসনে ব্যবহৃত ব্যয়ের ব্যাপারে আইএমএফকে জানিয়েছে। এখন সামঞ্জস্যকারীকে ২০২২-২৩ সালের বাজেটের প্রাক্কালে জিডিপির ৪.৯ শতাংশে পরিকল্পিত বাজেট ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধিতে কাজে লাগানো হবে।
পাকিস্তান এবং আইএমএফের মধ্যকার আলোচনা এখনো চলমান, কিন্তু তাদের মধ্যে কর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এখনো মতপার্থক্য রয়েছে। সেই সাথে গ্যাসের শুল্ক বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান ঋণ, ব্যয় বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন ব্যাপারে তাদের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আইএমএফ পাকিস্তানকে গ্যাসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিল। কারণ পাকিস্তান সরকারের গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত রাখার কারণে গ্যাস ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকার গ্যাস খাতের উন্নয়নের পরিকল্পনা করলেও বিদ্যুৎ খাতে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বিদ্যুৎ খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটিতে এসে পৌঁছেছে। মাসিক এবং ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এ ঋণের পরিমাণ হ্রাস করার জন্য আইএমএফের সাথে সম্মত সকল লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা যায়নি। শুধুমাত্র নলকূপের উপর ভর্তুকি চলমান অর্থবছরে জমা সার্কুলার ঋণে ২০০০ কোটি রুপি বৃদ্ধির কারণ হবে।
আইএমএফ কৃষক প্যাকেজের পাশাপাশি পাঁচটি রপ্তানিমুখী খাত ও কৃষি খাতের জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাসের শুল্ক হ্রাস করার ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও আপত্তি তুলেছে।
বিদ্যুতের বিল বিলম্বে পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো শীতকালের মধ্যেই অর্থ পুনরুদ্ধার করা হবে এটা জানার সাথে সাথেই বিদুৎ মন্ত্রণালয় বিল পরিশোধ করতে বিলম্ব করছে।
আইএমএফের ধারণা এফবিআর তার বার্ষিক পরিকল্পিত কর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৪৭ হাজার কোটি রুপি সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে না। আর যদি তারা এ কর সংগ্রহ করতেও পারে তবুও কর এবং জিডিপির অনুপাত হ্রাস পাবে। কিন্তু এফবিআরের বক্তব্য হলো তারা এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে। তবে মামলা মোকদ্দমার কারণে রাজস্ব সংগ্রহ স্তিমিত হতে পারে যার ফলে ২৫০০ কোটি টাকা আটকে যেতে পারে। এ টাকা কেবল আদালতের স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার পর সামনের মাসেই উদ্ধার হতে পারে। এফবিআর অবশ্য পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিতভাবে অনুরোধ পাঠিয়েছে যেন কোটি কোটি টাকা জড়িত মুলতবি মামলাগুলোকে দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, আইএমএফের সাথে এখনো আলোচনা ইতিবাচকভাবেই অব্যাহত রয়েছে। উভয় পক্ষ শীঘ্রই স্টাফ লেভেল চুক্তিতে সক্ষম হবে। আইএমএফের একজন কর্মকর্তা বলেছেন নবম পর্যালোচনার প্রেক্ষাপটে আজ পর্যন্ত সমস্ত আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।
তারা বন্যার পর সামষ্টিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সংশোধনের পাশাপাশি সপ্তম এবং অষ্টম সম্মিলিত পর্যালোচনা সমাপ্ত হওয়ার পর গৃহীত রাজস্ব, মুদ্রা, বিনিময় হার এবং শক্তি নীতিগুলো গভীরভাবে মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয়েছে।
বন্যা থেকে মানবিক ও পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তাগুলোকে পর্যাপ্ত ভাবে মোকাবেলা করবে এবং সেইসাথে উপলব্ধ অর্থায়নের আর্থিক এবং বাহ্যিক স্থায়িত্ব রক্ষা করবে এমন নীতিগুলোর উপর আলোচনা করতে আইএমএফ ইচ্ছুক।
গত সোমবার, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নির্বাহী বিভাগ পাকিস্তানসহ বেশিরভাগ মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশগুলো যারা সারচার্জ দ্রুত প্রদান করতে পারেনি তাদের নিয়ে আলোচনা করেছে।
আর্জেন্টিনা, পাকিস্তান এবং অন্যান্যরা আইএমএফকে সারচার্জগুলো বাদ দেওয়ার বা মওকুফ করার অনুরোধ জানায়। আইএমএফ ধারণা করছে এই সারচার্জের জন্য করোনা শুরুর পর থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তাদের প্রায় ৪০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং অন্যান্য উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো অবশ্য এর বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে এখন বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ অবস্থায় আইএমএফের অর্থায়নের মডেল পরিবর্তন করা উচিত নয়।
আইএমএফের একজন মুখপাত্র জানান, তারা সারচার্জ বিষয়ক পরিবর্তন নিয়ে বৈশ্বিক ঋণদাতাদের সাথে আলোচনা করেছেন। কিন্তু অবশেষে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব হয়নি।
এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো বিশদ বিবরণ প্রদান করা না হলেও তহবিল জানিয়েছে ভবিষ্যতে প্রেস রিলিজ প্রকাশের মাধ্যমে বোর্ডের আলোচনার পূর্ণ বিবরণ প্রদান করা হবে।
বোস্টন ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি সেন্টারের প্রধান কেভিন গ্যালাঘের বলেছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে বড় বড় অংশীদারদের তাদের বিরোধিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। তবে এটাও সত্য যে আইএমএফের অংশীদারেরা আলোচনাটিকে সরাসরি প্রত্যাখানও করেননি।